1. admin@narsingdirkanthosor.com : admin :
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

নিত্যদ্রব্যের বাজারের স্টিয়ারিং সরকারকেই ধরতে হবে : তৌহিদ বিল্লাহ

তৌহিদ বিল্লাহ, পলাশ, নরসিংদী।
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩
  • ২৯১ বার

মাহে রমজান আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে৷ এই মাসে বিশ্ব মুসলিমগণ রহমত ও বরকতের পারলৌকিক মণিমুক্তা আহরণ করবেন৷ পাশাপাশি মহান রবের অবারিত ক্ষমার বিরাট অফার লুফে নেন৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের দেশেও রমজান কেন্দ্রীক পুরো একটা মাসজুড়ে মসজিদগুলোতে পরিশুদ্ধতার খুশবো ছড়িয়ে থাকে৷

কিন্তু আফসোস! পরিশুদ্ধতা ও সংযমের এই খুশবো মসজিদ থেকে বের হয়ে মাঠে-ঘাটে-বাজার-হাটে আর দেখা মিলে না! পবিত্র রমজান মাস গোটা বিশ্ববাসীর জন্য নিয়ে আসে শান্তির বার্তা৷ কিন্তু সংযমের এই মাসেও এদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়িদের লোভাচ্ছন্ন ও অসংযমী আচরণে নিত্যপণ্যের বাজার হয়ে উঠে অসহনীয়। নাজাতের মাস পরিণত হয় অস্থিরতার মাসে৷

অথচ ইসলামে অতিরিক্ত মূল্য আদায় কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামের আত্মসংযমের শিক্ষাকে মসজিদ থেকে বের করে এনে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবন রাঙাতে পারিনা৷ তাই যদি না হবে তবে প্রতিটি রমজান আসলেই দেশের নিত্যদ্রব্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আগুন জ্বলে কেন? কারা সৃষ্টি করে এসব কৃত্রিম সংকট? যারা এসবের সাথে জড়িত তারা তো আর ভিনগ্রহের কেউ নয়৷ তারাও কিন্তু রমজান মাসে মসজিদে যায়!

পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত দেশ এমনকি ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো রমজানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যবসায়ীগণ তাদের পণ্যের মূল্যকে সহনীয় রাখেন৷ শুধু তাই নয়, ঐসব দেশে রমজান এলেই নিত্যপণ্যের উপর ৫০-৭০ শতাংশ ছাড় দেয়ার উৎসব চলে৷ আর আমাদের দেশে পুরো উল্টো চিত্র!

রমজান আসলেই দেশে নিত্যদ্রব্যের দামের আগুনে ঝলসে যায় মধ্য ও নিম্নবিত্তের প্রাণ! বাংলাদেশের এই দৃশ্য নতুন নয়, রমজান এলেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য যেন সংযমের কোন বাঁধকেই মানতে নারাজ৷ বাজারে এমন অস্থিরতার পেছনে ডলার সংকটে এলসি না খুলতে পারা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে সংকটসহ নানা অভিযোগ করা হয়।

এসব অভিযোগ যেমন সত্য তেমনি কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, কৃষিজমিতে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে বাজারে আসার পর বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করতে হয়, এসবও সত্য৷ অর্থাৎ দ্রব্যমূল্যের যে আগুনে ভোক্তাদের পুড়তে হয়, তার উপযুক্ত লভ্যাংশ কিন্তু কৃষক পান না। পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় পথিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

বছরের পর বছর এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে কেন সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে না? পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির এসব সুস্পষ্ট কারণ কি সরকারের দৃষ্টগোচর হয় না? তাছাড়া বাড়তি মূল্য পাওয়ার আশায় পণ্য মজুদ করে রাখার মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এসব কৃত্রিম সংকট তৈরী কে বা কারা করে তা কি সরকার জানে না?

যে চক্রই মানুষের তথা সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন পেটের অাহারে অমানুষিক পন্থায় লাথি মারে তাদের এসব কর্মকান্ড ভন্ডুল করার চ্যালেঞ্জ সরকারকে নিতেই হবে৷ সরকারকে মনে রাখতে সাধারণ মানুষের পেটের ক্ষুধা মিটাতে ব্যর্থ হলে হাজারো উন্নয়নও সফল হবে না৷

বাজারে অগ্নিমূল্যের পেছনে দৃশ্যমান কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটচক্র দায়ী হলেও ক্রেতা সাধারণেরও কিছু দায় থেকে যায়৷ অনেকে সারা মাস বাজারে না গিয়ে রমজানের আগেই সব বাজার একসঙ্গে করে ফেলার মানসিকতা রাখেন৷ এতে করে বাজারের ওপর চাপ বাড়ে৷ আর আপনার একসঙ্গে পুরো মাসের বাজার করার সুযোগটিই নেয় মজুদদার চক্র৷

যেহেতু তারা অল্পসময়ে অধিক পণ্য বিক্রির গ্যারান্টি পেয়ে যায়, সেহেতু তারাও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে এই সুযোগে মজুদকৃত পণ্যগুলো বাজারে ছাড়ে৷ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দিন এনে দিন খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। একজন ক্রেতা হিসেবে অন্য ক্রেতার কথা চিন্তা না করে আপনিও যে সিন্ডিকেটের সহযোগী হয়ে যাচ্ছেন ভেবেছেন কখনো?

সংযমী হওয়ার এই মাস নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের শিক্ষা দেয়। কিন্তু দীর্ঘ রমজান জুড়ে আমরা সংযমের যে শিক্ষা গ্রহণ করি তার প্রভাব দেশের বাজারে কেন পরে না? এক সময় কোন একটি পণ্যের দাম বছরে কিংবা ছ’মাসে একবার বাড়তো৷ কিন্তু গতকয়েক বছর যাবত নিত্যদ্রব্যের দাম মাস ভিত্তিকও আর বাড়ছে না৷

এখন নিত্যদ্রব্যের দাম প্রতি সপ্তাহ, প্রতিদিন, এমনকি সকালের দাম সন্ধ্যায়ও বাড়েছে৷ চাল, ডাল, তেল, পেয়াজ, রসুন, চিনি, খেজুর, বিভিন্ন বিদেশী ফল, মাংসসহ দাম বাড়েনি এমন পণ্য পাওয়াই এখন দুষ্কর৷ গরু কিংবা খাসির মাংস নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তেরও নাগালের অনেক বাইরে৷

পোল্ট্রি মুরগির মাংসের দাম ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলছে৷ পোল্ট্রি মুরগির মাংস এদেশের মানুষের আমিষ পূরণের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল ছিল৷ সেটিও এখন ২০০-২৫০ টাকায় উঠা নামা করছে! গরু-খাসির মাংস ১০০ গ্রাম, ১৫০গ্রাম, ২৫০গ্রাম করে ভাগা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে৷ বাজার দর কতটা বেসামাল হলে এসব দৃশ্য এখন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে ভাবা যায়!

সবমিলিয়ে রমজান শুরু হওয়ার আগেই নিত্যদ্রব্যের বাজারের আগুনে সাধারণ ক্রেতাদের ত্রাহি অবস্থা৷ এই যদি নতুন করে রমজান কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট চক্র দামের উপর ঘি ঢালার পায়তাঁড়া করে, তাহলে সাধারণ মানুষের রমজানের সিয়াম সাধনা যে বিভীষিকায় পরিণত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ এই ত্রাহি অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় সরকারের হাতে কি নেই?

অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ বাড়লে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে৷ তাহলে এভাবে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিকে কি আমরা পণ্য সরবরাহের অপ্রতুলতা বলার সুযোগ আছে? কিন্তু এমনটা তো দেখা যাচ্ছে না৷ পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ তো বাজারে দৃশ্যমান৷ সুতরাং এখানে কুচক্রী সিন্ডিকেটের অশুভ ছায়া বিরাজমান৷

সরকার কি পারে না অন্তত রমজানে অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের অশুভ জাঁল ছিন্নভিন্ন করতে? অবশ্যই সরকার পারে৷ প্রতি বছর রমজান কেন্দ্রিক গজিয়ে উঠা সিন্ডিকেটকে হটাতে পারে একমাত্র সরকারই৷ সরকারকে এটা পারতেই হবে৷ সেজন্য সমগ্র দেশের প্রশাসনিক সকল স্তরকে সক্রিয় করে বৃহৎ বাজার থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র বাজার পর্যন্ত সকল বাজার নিয়ন্ত্রণের স্টিয়ারিংটি সরকারের হাতে নিতেই হবে৷

মোবাইল কোর্ট, টাস্কফোর্স গঠন, বাজার মনিটরিংয়ের যত রকম পথ ও পন্থা আছে তা সরকারকে ব্যবহার করতে হবে৷ সবগুলোকে সমগ্রদেশে একযোগে কাজে লাগাতে হবে৷ আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রী ব্যবসায়ীসহ সকলকে রমজানে সংযমী হওয়ার আহবান করেছেন৷ শুধু আহবানে এদেশে কখনো কাজ হয়নি, হবেও না৷

রমজানে সাধারণ মুসল্লিদের স্বাভাবিক জীবন বিষিয়ে তুলতে অতি মুনাফা লোভীরা ওঁৎ পেতে আছে৷ তাদের মজুদ করা সকল গোডাউনে সর্বাত্মক নজরদারি বাড়াতে হবে৷ এভাবে কোন রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলার অধিকার কোন চক্রের নেই৷ দেশের জনগণ যদি সার্বভৌমত্বের স্মারক হয়ে থাকে, তাহলে এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে এভাবে বিপাকে ফেলাও রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ হবে না কেন?

এটাও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার প্রয়াস৷ সেজন্য এসব অতি মুনাফালোভী চক্রকে সহজেই আইনের আওতায় আনতে যুৎসই আইন প্রণয়ন করতে হবে৷ সুনিশ্চিত করতে হবে ভোক্তা অধিকার৷ সেই সাথে ভোক্তা সাধারণকেও সচেতন হতে হবে৷ সরকারের বাজার মনিটরিং কমিটিকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করে সরকারের পাশে থাকতে হবে৷

ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত যে কোনো নীতিনির্ধারণীমূলক ক্ষেত্রে ভোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে৷ আমাদের দেশে ভোক্তাদের ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা নেই বললেই চলে৷ প্রতিটি বাজারে-বন্দরে ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের কাজ সম্পর্কে ক্যাম্পেইন করতে পারে৷ ভোক্তাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে পারলে সাধারণ মানুষই বাজারের প্রহরী হয়ে উঠবেন৷ এভাবে সহজেই বাজারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ তাই সরকারের পক্ষ থেকেও ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার জরুরি৷

পরিশেষে বলবো, মাহে রমজান শুধু আত্মশুদ্ধির মাসই নয়, সাথে সাথে আত্মসংযমেরও মাস৷ দীর্ঘ এগারোটি মাস কীভাবে সংযমের সাথে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনে পূর্ণতা লাভ করা যায় তারই প্রশিক্ষণ দেয় এই রমজান মাস৷ তাই রমজানের শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রকে হতে হবে জনকল্যাণমুখী অার ব্যক্তিকে হতে পরার্থের জন্য নিঃস্বার্থ প্রাণ৷

তৌহিদ বিল্লাহ ,তরুণ কলামিস্ট ও সাবেক শিক্ষার্থী, নরসিংদী সরকারি কলেজ ৷

আরো খবর..
© নরসিংদীর কন্ঠস্বর
Developed By Bongshai IT