1. admin@narsingdirkanthosor.com : admin :
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

ঘোড়াশালে জমিদারের জন্য তৈরি হয়েছিল রেলস্টেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদীর কন্ঠস্বর :
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২
  • ১০১৯ বার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ রেলওয়ে স্টেশন। বাংলাদেশের প্রথম দ্বিতল বা দোতলা ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় অবস্থিত একটি রেলওয়ে স্টেশন।

জানা যায়, ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মানের দায়িত্ব নেয়। পরবর্তীতে অন্যান্য স্টেশনের ন্যায় ১৯১০ সালে ঘোড়াশাল রেলওয়ে স্টেশনটি স্থাপন করা হলেও ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি ১৯১৪ সালে স্থাপন করা হয়।

ঘোড়াশালের তৎকালীন জমিদার হাজী মোহাম্মদ আবু সাঈদ (সাজদা মিয়া) জমিদারীর পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের মনোনীত একজন মেজিষ্ট্রেট ছিলেন। সেই সুবাদে ঘোড়াশাল থেকে রেলপথে তাকে ঢাকায় যেয়ে অফিস করতে হতো। পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া এবং চরসিন্দুরের লোকজনকেও নদী পথে এসে ঘোড়াশালের এই স্টেশনটি রেলপথে যাতায়াতের জন্য ব্যাবহার করতে হতো।

কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদীর পার থেকে স্টেশনটির দূরত্ব ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার। নদীপথে এসে পায়ে হেঁটে যাত্রীদের স্টেশনে আসাযাওয়াটা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। সেইদিক বিবেচনা করে জমিদার সাজদা মিয়া শীতলক্ষ্যা নদীর পারে আরেকটি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের নিকট লিখিত আবেদন জানান। তার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি দ্বারা নির্নিত হয় বর্তমান ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশন।

এ ব্যাপারে ঘোড়াশাল দক্ষিণ চরপাড়ার কোরবান আলী জানান, তখন স্টেশনের এই ঘরটি চারদিকে মুলিবাঁশ ও উপরে ছিল টিনের চালা। নিচে টিকেট বিক্রি করার জন্য ছিল টিকেট ঘর, আর উপরে ছিল বিশ্রামাগার। রেলগাড়িতে থাকতো জমিদার সাহেবের জন্য নির্ধারিত একটি কামরা। ফ্ল্যাগ স্টেশনের পুরাতন স্থাপত্যটি গত এরশাদ সরকারের আমলে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হলেও জমিদার আহমদুল কবির মনু মিয়ার বাধার কারণে তা পরেনি।

ঘোড়াশাল টেকপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই খান জানান, সাজদা মিয়া ছিলেন, ঘোড়াশাল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় জমিদার। স্টেশনটি তার জন্যই হয়েছে। যেদিন ঢাকা যেতেন, সংবাদটি আগেই রেলওয়ে কোম্পানিকে জানানো হতো। গাড়ী থামিয়ে রেলওয়ে কোম্পানির লোক বাড়িতে এসে বলতেন জমিদার সাহেবের জন্য গাড়ী থামিয়ে রাখা হয়েছে।

তখন তিনি পালকিতে চড়ে স্টেশনে যেতেন। পালকির আগে পিছে থাকতেন ৩ জন করে ৬ জন ঋষি, আঞ্চলিক ভাষায় যাদেরকে বলা হয় “মাওরা”। সাহেবকে স্টেশনে আনা-নেওয়ার জন্য তাদেরকে প্রস্তত রাখা হতো। মুলতঃ জমিদার সাজদা মিয়ার জন্যই ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি করা হয়েছে বলে জানান।

ঘোড়াশাল গ্রামের হযরত আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সাথে জমিদার সাজদা মিয়ার ছিল খুবই সুসম্পর্ক। আর এই জন্যই মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে আরেকটি ফ্ল্যাগ স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। যেদিন অফিসের কাজে ঢাকা যেতো, চট্টগ্রাম থেকেই জমিদার সাহেবের জন্য একটি কামরা বরাদ্দ থাকতো। জমিদার ছাড়া আর কেউ এই কামরাটিতে উঠতোনা।

ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ রেলওয়ে স্টেশনটির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার দাবি স্থানীয়দের। পাশাপাশি ১ শত ৮ বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো রক্ষণা বেক্ষণের মাধ্যমে এটিকে পর্যটন মন্ত্রনালয়ের অধীনে নিয়ে পর্যটন এলাকায় রুপান্তরিত করতে সরকারের কাছে সর্ব মহলের দাবী।

প্রতিদিন বিশেষ করে যেকোনো ছুটির দিনে নরসিংদী জেলা ছাড়াও পার্শ্ববতী গাজীপুর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন অবসর সময় কাটাতে। এখানে দুটি রেলওয়ে সেতুও রয়েছে এবং আসা যাওয়ার রাস্তা গুলোর সৌন্দর্য বর্ধণ করা হয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য, যা দেখলে যে কারো মন জুড়াবে।

আরো খবর..
© নরসিংদীর কন্ঠস্বর
Developed By Bongshai IT