নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ২১ আগস্ট। নরসিংদী জেলার গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের ৫২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯, আগা সাদেক রোডের “মোবারক লজ” এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে। যা এখন মতিননগর গ্রাম নামে পরিচিত। ৯ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৬ষ্ঠ। তাঁর বাবা মৌলবী আব্দুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিকেল ৪টায় তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর রায়পুরা বাজারে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকশনসহ মেট্টিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পিএএফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
কমিশনপ্রাপ্তির পর তিনি করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) এয়ার বেজের ২ নম্বর স্কোয়াড্রনে জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসেবে নিযুক্ত হন। এখানে তিনি টি-৩৩ জেট বিমানের ওপর কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৭১ সালের এ দিনে করাচির মাসরুর বিমানঘাঁটি থেকে টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন তিনি।
সেখানে বিমানবাহিনীর সেফটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় রশিদ মিনহাজ নামে একজন শিক্ষানবিশ পাইলটকে অজ্ঞান করে বাংলাদেশ অভিমুখে রওনা দেন। বিপদবার্তা শত্রুদের কাছে পৌঁছালে আরও চারটা বিমান মতিউর রহমানকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে মতিউরের সামনের আসনে বসে থাকা মিনহাজের জ্ঞান ফিরে এলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি।
এর ফলে ভারতীয় সীমান্তের ৩৫ মাইল দূরে থাট্টায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে নিজ আসন থেকে ছিটকে পড়ে শহীদ হন মতিউর রহমান। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মতিউর রহমান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে মতিউরের অসম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ জাতীয় খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে।
পাকিস্তান সরকার মতিউর রহমানের মরদেহ করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে সমাহিত করেছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে ২৪ জুন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে তাকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫ জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।