নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ শহীদ আসাদ দিবস। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আজকের এই দিনে দেশমাতৃকার টানে বাংলা মায়ের যে সকল বীর দামাল ছেলেরা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন শহীদ আসাদ তাদের মধ্যে অন্যতম।
১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্র সমাজের ১১ দফা কর্মসূচীর মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। তার মৃত্যু ছিল এক বীরের মৃত্যু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে এই সাহসী যোদ্ধার জীবন বিসর্জনে জেগে ওঠে গোটা জাতি।
২০ জানুয়ারি আসাদ শহীদ হওয়ার পর শোক পালন শেষে আওয়ামীলীগের ছয় দফা ও ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলন একাকার হয়ে যায়। আন্দোলনে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে। গোটা জাতির বিদ্রোহে জন্ম নেয় ঐতিহাসিক ৬৯’ এর গণঅভ্যুত্থান। পরে সংঘটিত ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে পুর্ণতা ঘটে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতনের মধ্যে দিয়ে। ৬৯’র ২০ জানুয়ারি ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধিকার আদায়ের স্মরণীয় শপথের দিন।
১৯৪২ সালের ১০ জুন আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম আলহাজ্ব মৌলভী এম. এ. আবু তাহের মাস্টার। মাতার নাম মতিজাহান খাদিজা খাতুন।
শহীদ আসাদ ১৯৬০ সালে শিবপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন সম্পন্ন করে সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে ইতিহাসে অনার্স বি,এ ও ১৯৬৮ সালে এম, এ পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা সিটি ‘ল, কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলে থাকতেন তিনি। তৎকালীন ঢাকা হলে ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন (মেমন গ্রুপ) আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রোববার মাওলানা ভাসানী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হাট বাজারে হরতাল আহ্বান করেন। শিবপুরের তৎকালীন কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মান্নান ভূইয়া ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা, ঢাকা হলের ভিপি আসাদুজ্জামান আসাদ, মনোহরদী গোতাশিয়ার শামসুজ্জামান মিলন, বাজার কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারি আব্দুল বাতেন, নূরজাহান বেগম, এম এন রশিদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সফল ভাবে এ হরতাল পালন করে।
হরতাল পালনকালে হাতিরদিয়ায় পুলিশের গুলিতে ৩ জন শহীদ হন। আসাদ মাথায় আঘাত প্রাপ্তাবস্থায় ঢাকায় পত্রিকা অফিসে এ ঘটনার খবর পৌঁছালে পরদিন পত্রিকাগুলোতে এ সংবাদ ছাপা হয়। এ ঘটনা পূর্ব বাংলার জনসাধারণকে বিদ্রোহী করে তোলে এবং তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। স্বৈরশাসক উচ্ছেদে ছাত্র সমাজ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষনা করে। আন্দোলন জোরদার হতে থাকলে স্বৈরশাসক মিছিল সমাবেশের উপর ১৪৪ ধারা জারি করে।
২০ জানুয়ারি পুলিশী জুলুমের প্রতিবাদে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে এক বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলের একাংশ ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা ধরে চাঁনখার পুলের দিকে অগ্রসরকালে স্বশস্ত্র পুলিশ ইপিআর বাহীনির সঙ্গে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে বেলা আনুমানিক দেড়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকে প্রধান ফটকের পাশে ফুটপাতে পুলিশের পিস্তলের গুলিতে আসাদের হৃদপিন্ড বিদীর্ণ হয়। গুলিবিদ্ধ আসাদের লাশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২১ জানুয়ারি নিজ গ্রাম শিবপুরের ধানুয়ার পারিবারিক গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যুব, শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি নরসিংদীর শিবপুরে শহীদ আসাদ পরিষদ এর উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী চলছে।