সাব্বির হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক : এশিয়ার বৃহত্তম নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় পরীক্ষামূলক ভাবে ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫ টায় সার কারখানার ইউরিয়া প্লান্টে অ্যামোনিয়া আর কার্বন ড্রাই অক্সাইড এর বিক্রিয়া করে ইউরিয়া উৎপাদন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক।
তিনি বলেন, আমরা আজ ৫০% লোডে পরীক্ষামূলক ভাবে ইউরিয়া প্লান্ট চালু করে সফল ভাবে ইউরিয়া উৎপাদন করতে পেরেছি। এতে প্রতি ঘন্টায় ১৪০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। এখন সারের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য তা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো ইউরিয়া সার উৎপাদন করা, তা আমরা সফল করতে পেরেছি। এখন ধীরে ধীরে এটার লোড বাড়িয়ে ইউরিয়া স্যারের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। আর এই মাসের ৩০ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার কারখানাটির হয়তো আনুষ্ঠানিক ভাবে শুভ উদ্বোধন করবেন। এসময় সারকারখানার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ও জাপানী প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি সুলভ মুল্যে কৃষকদের কাছে সার পৌঁছে দিতে ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের নির্মান কাজ শুরু করে শিল্প মন্ত্রনালয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি গত ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এতে বছরে ৯ লক্ষ ২৪ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়ার সার উৎপাদন সম্ভব হবে।
চার বছর মেয়াদি এ জিপি প্রজেক্টের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি। কারখানাটি দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন হিসাবে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। আর ১ টন সার উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ ২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস খরচ হবে। সেদিক থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদনের জন্য তিতাস গ্যাসকে প্রায় ৭০ হাজার এমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে তুলনামূলক কঠিন শর্তে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট হিসেবে জাপান ও চীনের ঠিকাদারদের যৌথ কনসোর্টিয়াম ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড (এমইউএফজি) ও দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড (এইচএসবিসি) ৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার ঋণ সংগ্রহ করে দেয়। কমিটমেন্ট ফি, সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে এ ঋণের সুদের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। চার বছরের নির্মাণকাল সহ মোট ১৫ বছরে কনসোর্টিয়ামকে মোট ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
কারখানাটি দেশের কৃষি উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট, ইউরিয়া প্ল্যান্ট এবং ইউটিলিটি দৃশ্যমান। এছাড়া, পিডিবি হতে পাওয়ার রিসিভিং, ইমাজেন্সি ডিজেল জেনারেটরের লোড টেন্ট সম্পন্ন হয়েছে, কুলিং ওয়াটার সিস্টেমে ওয়াটার ফ্ল্যাশিং ও কেমিক্যাল ক্লিনিং, নাইট্রোজেন ইউনিটের Instrument Air Compressor এর প্রি-কমিশনিং এবং কমিশনিং শেষ হয়েছে। আজকে ইউরিয়া প্লান্টে অ্যামোনিয়া আর কার্বন ড্রাই অক্সাইড এর বিক্রিয়া করে পরীক্ষামূলক ভাবে ইউরিয়া উৎপাদন করা হয়।