নরসিংদী প্রতিনিধি : আইডি কার্ডে উনার নাম মতিউর রহমান হলেও সকলেই উনাকে হকার মতি ভাই বলেই ডাকেন। একাধারে ৬০ বছর ধরে মানুষের বাসা বাড়ি আর অফিসে দিয়ে যাচ্ছেন দৈনিক পত্রিকা। পত্রিকা বিক্রীর টাকা দিয়ে গত বছর আদায় করেছেন হজ্জ। বয়সের কারণে শরীর কিছুটা নূয়ে গেলেও প্রত্যেক কাক ডাকা ভোরে পত্রিকা পৌঁছে দেন গ্রাহকের কাছে। রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজে উনাকে ক্লান্ত হতে দেখেনি কখনো কেউ।
৬০ বছর যাবৎ এই পত্রিকা সেবা দানকারী ব্যক্তিটির বাড়ি মনোহরদী পৌরসভার হাররদিয়া গ্রামে। বয়স ৭২ বছরের ঘরে।
পত্রিকা বিক্রীর পেশায় এসেছেন কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মতি জানান, শৈশবে পিতার হাত ধরে দৈনিক পাকিস্তান আর অবজারভার পত্রিকা দিয়ে হকারি জীবন শুরু। সময়ের আলোকে সকল ধরণের পত্রিকা ফেরি করে আজ ৬০ বছর ধরে আছি একই পেশায়। ৬০ বছর আগে যে ভাবে সাইকেল চালিয়ে অফিস আর মানুষের বাসা-বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছে দিতাম এখনো সে একই কায়দায় পৌঁছে দিচ্ছি পত্রিকা।
মতির ভাষায়, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের আগ থেকে তিনি এ ব্যবসায় আছেন। সে সময় আগের দিনের পত্রিকা আসত পরের দিন। পত্রিকা আসত শিবপুরের আব্দুল খালেক মাস্টারের নামে। সেখান থেকে মাত্র ২০ টি পত্রিকা এনে বিক্রি করতেন তিনি।
আর ২০ টি পত্রিকা কেবল মনোহরদী সদরে নয় পাশ্ববর্তী গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের পাঠকের কাছে ও বিক্রী করতেন। সে সময় মতি ভাই পত্রিকার ব্যবসা ছাড়াও ডাক বিভাগের রানের চাকুরী নেন। মতি ভাই ডাকের চিঠি নিয়ে যেতেন শিবপুরে।
আবার শিবপুর থেকে পত্রিকা আর চিঠি নিয়ে আসতেন মনোহরদীতে। এভাবে কিছুদিন চলার পর নিজেই এজেন্ট হয়ে যায় পত্রিকার। কম করে হলেও দৈনিক ৫০/৬০ কি.মি সাইকেল চালাতে হতো তখন উনাকে। আর এভেবেই যুগ যুগ ধরে বাবার দেখানো পথ ধরে চলতে থাকে মতি ভাইয়ের পত্রিকা সেবা।
মতি ভাই জানান, ১০ বছর ধরে ডাক বিভাগের চাকুরী থেকে অবসরে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু ধারাবাহিক পত্রিকা সেবা থেকে নেননি অবসর। এখনো মনোহরদী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অফিস, পৌরসভা অফিস সহ বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, এনজিও অফিস, মনোহরদী বাজারের দোকান এবং বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সানন্দেই পালন করেন মতি ভাই।
দৈনন্দিন কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে মতি ভাই জানান, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ফজরের নামাজ আদায় করেন তিনি। এর পর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী সাইকেল নিয়ে চলে আসেন মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন যাত্রী ছাউনীতে। পত্রিকার গাড়ি থেকে বান্ডেল নামানোর পরে বান্ডেল খোলে এক এক করে হিসেব আর ভাজ করে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বাঁধেন পত্রিকা।
এর পর ছুটে চলেন আপন মনে পত্রিকার পাঠকের দুয়ারে। আর পাঠকের কাছে পৌঁছে দেন দেশ বিদেশের নানা খবর। যুগের যাথে সাথে যোগাযোগ বাহনের পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘদিনের সাথের কর্মীরা সাইকেল ফেলে নিয়েছেন মোটর সাইকেল। কিন্তু একজন মতি ভাই এখনো সেই সাইকেলকেই ধরে রেখেছেন যোগাযোগের বাহন হিসেবে।
##