প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায়। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক নান্দনিক ,আধ্যাত্মিক ও আবেগ অনুভূতির বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধ, বিজ্ঞান মনস্কতা সৃজনশীলতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার বুনিয়াদ হল প্রাথমিক শিক্ষা। বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ও মানবিক গুণসম্পন্ন একজন আদর্শবান মানুষ হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রাথমিক শিক্ষা।
শিশুকে ভবিষ্যতের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা হলো প্রথম ও প্রধান সোপান। গত এক দশকের বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। প্রাথমিক শিক্ষার ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৩ সালে ৩৬,১৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কে জাতীয়করণ করেন।
শিক্ষকদের নতুন পদ সৃষ্টি, বেতন কাঠামো বৃদ্ধি, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী চালু, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের নতুন বই প্রদান, উপবৃত্তি কার্যক্রম, ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, বিদেশ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, খুদে ডাক্তার কার্যক্রম, স্টুডেন্ট কাউন্সিল কার্যক্রম, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, বিভিন্ন জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিবস সমূহ পালন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় সঞ্চার হয়েছে গতিশীলতা।
আধুনিক ও বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইসিটি বেসড প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে ।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে ল্যাপটপ প্রদান ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, সংস্কার, নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা, স্যানিটেশন, ওয়াশ ব্লক স্থাপন সহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এসবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট এসডিজি ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা চারে টেকসই গুণগত মানসম্পন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ।সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যে সরকার শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশন ও তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকিকরণ এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করছে। এই শিখন পদ্ধতিতে শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ ,পাঠদান পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় ও আনন্দময় করে তোলা সম্ভব যা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য একান্ত প্রয়োজন ।তার সৃজনশীলতার উজ্জীবন এবং জীবনঘনিষ্ঠ জ্ঞান বিকাশে সহায়ক।
অতি সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে নেয়া হয়েছে নতুন প্রকল্প ।ইউ এস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউ এস এ আই টি)নতুন এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় । যার মাধ্যমে ১৫ টি জেলায় ১০ হাজার বিদ্যালয়ের বিশ হাজার শিক্ষকদের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে ।এর মাধ্যমে শিক্ষকগণ উদ্ভাবনী ও কার্যকর শিখন পদ্ধতি প্রয়োগে সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
সুনাগরিক সৃষ্টিতে এবং প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণে সব শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার বিকল্প নেই। শিশুর সঠিক বিকাশে একটি বড় অংশ নির্ভর করে বিদ্যালয়ের আনন্দঘন পরিবেশ শিক্ষকের দক্ষতা ও শিখন শেখানো কার্যক্রমের উপর তাই বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি শিক্ষকের দায়িত্ব হবে দায়িত্ব অনেক বেশি শিক্ষককে আন্তরিক ও যোগ্যতর হয়ে উঠতে হবে। একজন শিক্ষককে হতে হবে অনেক বেশি দায়িত্বশীল।
তাই বলা যায় বর্তমান সরকারের দূরদর্শী ও যুগ উপযোগী পদক্ষেপের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও গুণগতমান উন্নয়ন সম্ভব। আর তা বাস্তবায়িত হলেই নিশ্চিত হবে সকল শিশুর জন্য একিভূত এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা।লেখক : নরসিংদীর পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা আফসানা চৌধুরী পিএএ।