নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীতে দাম্পত্য কলহের জেরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করে সাইদুর রহমান রহিদ (৩৬) নামে এক যুবক। বুধবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় নরসিংদীর পুরানপাড়া এলাকায় চট্টগ্রামগামী তূণা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই যুবক।
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নিহত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ।
নিহত সাইদুর রহমান রহিদ ঢাকা দক্ষিণ কাফরুল এলাকার মো. ইসলাম শেখের ছেলে। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেতেন। সাত বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার ঘোড়াদিয়া সোনাতলা এলাকার রহমান মুন্সীর মেয়ে তহুরা খাতুনকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
এদিকে নিহত হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে সাইদুর রহমান রহিদ স্ত্রী-সন্তানসহ আরও কয়েকজন নিয়ে তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো :
প্রতিটা ছেলের জীবনেই তার প্রথম প্রেম তার মা আর দ্বিতীয় জন হচ্ছে তার সহধর্মীনী তৃতীয় তো তার সন্তান আমার পারসেপশনটা ছোটবেলা থেকেই এমন। কিন্তু আমি আমার বিবাহিত জীবনে এসে দুটোকে ব্যালেন্স করতে পারলাম না। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল মাঝখানে তহুরা ও তার পরিবার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল এমনটা কেন হয়? আজকে চার মাস তেইশ দিন আমরা সেপারেশনে আছি। এই প্রথমবারের মতো আমি আমার ভুলটা কোথায় হয়েছিল সেটা জানতে পারলাম গতকালকে রাত্রে। আমার পার্সেপশনে আমি সঠিক ছিলাম আছি। কিন্তু তহুরা তুমি যেই কারণটা গতকালকে বলছো এটা যদি তুমি আগেই বলতা আমাদের জীবনটা এমন হতো না। হয়তো ভিন্ন কোন মাত্রা যোগ হতে পারতো। অনেক চেষ্টা করছি তহুরা নিজের সাথে যুদ্ধও করেছি বেশ। সম্পদ সবসময় সম্মান বয়ে আনে না তহুরা মাঝে মাঝে সম্পদের জন্য সম্পর্কর পাশাপাশি অনেক জীবন ও চলে যায়। আমি অনেক আকুতি মিনতি করেছি যে ভুলে তুমি আমাকে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করিয়েছো আমি সেই ভুলটা সম্পর্কে অবগতই ছিলাম না। আমি ভাবতাম আমরা ভালো আছি সুখে আছি। তোমার আমার সফর হয়তো এই পর্যন্তই ছিল। তুমি আমাকে কখনো ভালবাসছো কিনা জানিনা তবে আমার প্রথম ভালোবাসা আমার মা আর বউ হিসেবে তুমি একজনই। আমি বাঁচার জন্য অনেক আকুতি মিনতি করেছি বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না। আজকেও তুমি নিজে আমাকে ডেকে এনে আমার সাথে তুমি আমাদের বাচ্চাকে দুচোখ ভরে দেখতে দিলেনা। আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতেও পারিনা সেই তুমি আমার সাথে প্রতারণা করলে। আমি তোমাকে একাধিকবার বলেছি আমি কাছের মানুষের কাছ থেকে আঘাত পেলে সহ্য করতে পারিনা আমার সেই ক্ষমতা নাই। চলে গেলাম এই পৃথিবীতে আমার সফর এই পর্যন্তই ছিল। ভালো থেকো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমার মৃত দেহটাকে বুঝে নিও। আমি তোমাদের সবাইকে অনেক ভালবাসি আমার জীবনের থেকেও বেশি। আমার মেয়েটাকে অবশ্যই শিক্ষা দিও তোর বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তোর বাবা লোভী ছিলেন না তোর বাবা সবকিছু তার কাছের মানুষকে দিয়ে দিতেই আনন্দ পেতেন। তোর বাবা আমাদের সবাইকে অনেক ভালবাসতেন। তোর বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। কত সুন্দর ছিল আমাদের জীবনটা ছবির মত সুন্দর। আমার শাশুড়ি আমার শ্যালক আর তাদের জমির দালাল মোশারফ সাথে আরেকজন আছে মামাতো সেলোক আহমদ আলী তোরা কি কখনো জানতে চাইছিস আমার কাছ থেকে কি তোরা কখনো শুনছিস আমার কথাগুলো কি বোঝার চেষ্টা করছিস? আমি কি তোদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেছি? তোরা আমাকে অনেক অপমান করছিস। ভালো থাকিস তোরা সবাই ভালো থাকিস। এই পৃথিবীতে আমার সফর এই পর্যন্তই ছিল পৃথিবী আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ বিদায় আলবিদা❤️❤️❤️❤️❤️
এ বিষয়ে পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, সাইদুর রহমান রহিদের স্ত্রী তহুরা খাতুন বিয়ের পরও স্থায়ীভাবে নরসিংদীতে বাপের বাড়িতে থাকতেন। বুধবার তিনি ঢাকা থেকে শুশুর বাড়িতে আসেন। আর শশুর বাড়িতে থাকা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলে আসছিল। এরই জের ধরে রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে পুরানপাড়া এলাকায় ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করে। পরে আজ মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ বেলা ১১টায় ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের ভাই লুৎফুর রহমান জানান, স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে আর তিনি সেটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে লিখে গেছেন। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা বিচার দাবি করছি।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহীদুল্লাহ্ বলেন, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।