1. admin@narsingdirkanthosor.com : admin :
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইল বিএনপি রায়পুরায় কৃষকদের নিয়ে ‘পার্টনার কংগ্রেস’ অনুষ্ঠিত ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করালে বিপ্লবী সরকার গঠন করবে ছাত্র-জনতা শিবপুরে ডাকাতি মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার সব দলকে আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াত আমিরের জনগণ দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর প্রধান উপদেষ্টার মর্যাদাপূর্ণ বিদায় চায়: মঈন খান ক্ষমতায় এলে জুলাই আন্দোলনে আহতদের দায়িত্ব নিবে বিএনপি: নরসিংদীতে রিজভী পদত্যাগ করবেন না প্রধান উপদেষ্টা, এপ্রিল মে মাসের মধ্যে নির্বাচন শিবপুরে আম পারতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু বিভাজনে কেবল অপশক্তির চক্রান্তই সফল হবে বলে সতর্ক করলেন আজহারী

রায়পুরার ২ যুবকের ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে মৃত্যু

এম আজিজুল ইসলাম | নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪
  • ৩৬৬ বার
Oplus_0

এম আজিজুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক : লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুই যুবক নিহত হয়েছে।

নিহতরা হলেন, উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে ইসতিয়াক হাসান ইমরান (৩২) ও চান্দেরকান্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার সৌদি প্রবাসি ওসমান মিয়ার ছেলে ফয়সাল আবেদিন (২৩)। নিহত ইমরান ওই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

গত মঙ্গলবার ১৮ জুন ইতালির দক্ষিণ উপকূলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী দুটি নৌকা ডুবে যায়। এর একটিতে ছিলেন ইমরান। এতে তিনিসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুসহ ৬০ জন নিখোঁজ আছেন। গত ১৮ দিন আগে সাগর পথে ইতালি রওনা দেন ফয়সাল আবেদিন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান তার পরিবার।

ইসতিয়াক হাসান ইমরানের মৃত্যুর সংবাদটি তাঁর ভাই আরমান আহমেদকে ফোনে জানান দালাল রাজিব মিয়া। দালালের বরাত দিয়ে আরমান বলেন, ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনের নিচে ইমরানসহ ১২ জন ছিলেন। ইতালির উপকূলে প্রবেশের পর তেলের ট্যাংঙ্ক বিস্ফোরণ হলে নৌকার ভেতরে পানি ঢুকে যায়। ওই সময় বাহির থেকে পাটাতন আটকানো ছিল। সেখানে স্টোক করে ইমরানের মৃত্যু হয়। নৌকাটিতে তখন ৬২ অভিবাসন প্রত্যাশী ছিল বলে জানান তিনি।

আরমান আরো জানান, লিবিয়া প্রবাসি দালাল রাজিব মিয়ার সাথে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়েছিল ইমরানের। সাগর পথে বিদেশ যাত্রায় বিরোধী ছিলেন তার পরিবার। কিন্ত ইমরানের জেদ ছিল ইতালি যাবে। লিবিয়ায় একটি গেমঘরে দুই মাস বন্দি ছিলেন তিনি। সেখানে পযার্প্ত খাবার ও পানি দেয়া হয়নি। শেষ গত ১৬ জুন তাঁর ভাইকে পাঠানো একটি ক্ষুদে বাতার্য় ইমরান বলেন, ‘আজকে গেম দেওয়া হবে। বাবা-মা কে দোয়া করতে বলিস’।

চান্দেরকান্দি উত্তরপাড়ার সৌদি প্রবাসি ওসমান মিয়ার ছেলে ফয়সাল আবেদিন। পড়াশোনা করতেন রায়পুরা সরকারি কলেজে। স্বপ্ন ছিল ইতালি যাবেন। গত বছর পরিবারের কাউকে না জানিয়ে উপজেলার বেগমাবাদ এলাকার লিবিয়া প্রবাসি রাকিব মিয়া নামে এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাড়ি জমান তিনি। চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়া পৌঁছে দালালকে ছয় লাখ টাকা দেন ফয়সালের পরিবার। বাকি চার লাখ টাকা ইতালি পৌঁছানোর পর দেওয়ার কথা ছিল।

ফয়সাল আবেদিনের মা শিল্পী বেগম বলেন, ঢাকা যাওয়ার কথা বলে দালালের মাধ্যমে দুবাই গিয়ে আমাকে ফোন দেয় ফয়সাল। ইতালি নেওয়ার ব্যাপারে দালাল রাকিব আমাদের সাথে কোন আলাপ করেননি। গত ১৮ দিন আগে ফয়সাল ফোনে জানাই সে ইতালি রওয়া দিচ্ছে। এরপর থেকে ছেলের মোবাইল বন্ধ।

এদিকে গতকাল বুধবার ফয়সাল আবেদিনের মৃত্যুর সংবাদটি ফোনে পরিবারকে জানান সৌদি প্রবাসি তার নিকট এক আত্মীয়। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেই পোস্ট থেকে জানা যায়, লিবিয়ার বেনগাজী শহরের তলময়দা সাগর তীরে দুটি লাশ ভেসে আসে। এর মধ্যে একজনরে পাসপোর্ট উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। উদ্ধার হওয়া ওই পাসপোর্টটি ছিল ফয়সাল আবেদিনের। তাঁর লাশ বর্তমানে স্থানীয় আল মারজা হাসপাতাল মর্গে আছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফয়সালের মৃত্যুর সংবাদটি মিথ্যা বলে দাবি করেন লিবিয়া প্রবাসি সিফাত নামে এক ব্যক্তি। বুধবার দুপুরে ফয়সালের চাচা মুজিবর রহমানের সাথে ফোনে আলাপের সময় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন আপনার ভাতিজা গ্রিসে আছে। পরে যোগাযোগ করবে। ভাতিজার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে ওই ব্যক্তিকে অনুরোধ করেন মুজিবর। সিফাত জানান, বিকেলে যোগাযোগ করিয়ে দিবেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।

নিহত ইসতিয়াক হাসান ইমরান ও ফয়সাল আবেদিনের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী দুটি পরিবারের সদস্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজিব মিয়া ও রাকিব মিয়া নামে দুই দালাল দীর্ঘ দিন ধরে লিবিয়া বসবাস করছেন। সাগর পথে ইতালি পাঠাতে অভিবাসন প্রত্যাশী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন তারা। অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইতালি পাঠানোর আগে লিবিয়ার গেম করে বন্দি করে রাখা হতো। সেখানে তাদের দেওয়া হতো না পযার্প্ত খাবার ও পানি। টাকা আদায় শেষ হলে নৌকায় করে সাগর পথে পাঠানো হতো ইতালি। অনিরাপদ যাত্রায় সাগরে ডুবে অনেক মারা গেলেও থামেনি তাদের কার্যক্রম।

রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগরের বাসিন্দা রাজিব মিয়া। দেশে তার বৃদ্ধ বাবা-মা থাকলেও তাদের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই রাজিবের। একই উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বেগমাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাকিব মিয়া। তিনিও ইতালি লোক পাঠান। তাদের কথা মতো দেশে থাকা পরিবার ও প্রতিনিধিদের কাছে টাকা পৌঁছে দিতেন ইতালিতে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।

মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ইসতিয়াক হাসান ইমরান মুছাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এমন মৃত্যু কাম্য নয়। অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার ব্যাপারে সকলকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান, এ ব্যাপারে নিহত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন অভিযোগ পাইননি।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান জানান, সাগর পথে ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়ে এমন তথ্য জানা নেই। তবে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো খবর..
© নরসিংদীর কন্ঠস্বর
Developed By Bongshai IT