হারুন অর রশীদ : বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নরসিংদীর খুদে ফুটবলার মেহেদি হাসান রিদম। মিডফিল্ড পজিশনে খেলা খুদে এ ফুটবলার সম্প্রতি ইতালির জাতীয় দলের খুদে ফুটবলার বাছাঁই পর্বে ৬০ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডে জায়গা করে নেন। অচিরেই এই ক্যাম্পে ২৮ জনের চূড়ান্ত তালিকাসহ অনূর্ধ্ব ১৪ সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজের জায়গা করে নেবেন। দেশের মুখ উজ্জল করতে স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখে রোম জার্সিতে ফটবল জাদুকরীর স্বপ্ন বুনছেন।
রিদমের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রায়পুরা ইউনিয়নের সাহারখোলা। শৈশবে বেড়েওঠা গ্রামে ও নরসিংদী শহরে। বর্তমানে তিনি ইতালির রোম শহরে পরিবারের সাথে বসবাস করে আসছেন। ক্লাব ল্যাজিওর রোম অঞ্চলের খুদে পরিচর্যা কেন্দ্র ‘সেক্সা ফ্লামিনিয়া লাবারো’- ক্লাবের হয়ে খেলে চলেছেন। দেশটির যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে। রিদমের এমন সাফল্যে গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের মাঝে বয়ছে বাধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। তারা খুবই আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
জানা গেছে, মেহেদী হাসান রিদমের বাবা আসাদ মিয়া ছোট্ট কাল থেকে ফুটবলের প্রতি ভালবাসা ছিলো প্রাণান্ত। ২০১৯ সালে নরসিংদীর পলাশের ঝিনারদীর নবজাগরণ ফুটবল একাডেমির কোচ মো অয়ালিদ খানের তত্ত্বাবধানে ছেলে রিদম ও হৃদয়কে ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত করতে একাডেমিতপ ভর্তি করান। সেখানেই তাদের আট-নয় মাসে ফুটবলের জাদুর হাতে করি শুরু। ২০২০ সালে রিদম পরিবারের সাথে সুদূর ইতালিতে চলে আসেন।
রিদম ২০২০ সালে বাবার সাথে ইতালিতে বসবাস শুরু করেন। তখন থেকে সেক্সা ফ্লামিনিয়া লাবারো ক্লাবে যুক্ত হন তিনি। গত ২০২২ মৌসুমে অনূর্ধ্ব-১২ একাডেমি কাপে রিদমের দল ইতালির নর্থ জোনে চ্যাম্পিয়ন হয়। তার পর থেকে ইতালি ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন রিদম। এর আগে আসাদ মিয়া ইতালিতে স্থায়ী হওয়ার পর রোম শহরে এএস মাঠের সঙ্গে সম্পর্কটাও ছিলো ঘনিষ্ঠ। মাঝে মধ্যে মাঠে যেতেন পরে সেখানে এএস রোমার ক্লাবের নিয়মিত সদস্য হন। সদস্য পদ ধরে রাখতে সপ্তাহে ১৫ ইউরো ফি দিতে হতো। এরি টানে সে খানে ছেলেকে ভর্তি করান।
রিদমের বাবা আসাদ মিয়া বলেন, এক সময় সেনাবাহিনীতে চাকরি করি। ২০০০ সালে চাকরি শেষে ইতালিতে পাড়ি জমাই। ২০১১ সালে নিজ দেশে ছুটিতে এসে নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাই। ২০১৮ সালে ফের একাই ইতালি চলে আসি। ২০২০ সালে রিদমকে ইতালিতে নিয়ে আসি। ইতালিতে আসার পর এএস রোমার একাডেমিক সিস্টেমে ছেলেকে যুক্ত করি। রিদম এখন সকলের স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাকে নিয়ে ইতালির কোচেরা বড় স্বপ্ন বুনছেন। ইতালি অনূর্ধ্ব-১৪ দলে জায়গাটা তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হবে। আশা করি, নিজের যোগ্যতায় বড় স্থানে জায়গা করে নেবে।
আল্লাহ তালা প্রত্যাশার চেয়ে আমাদের অনেক বেশি দিয়েছে। সে ফুটবলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়েই একসময় খেলবে। প্রিয় দলের জার্সিতে ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই যেন জীবনটা সার্থক হবো! সে কী করবে এটা সময়ই বলে দেবে। মুখ উজ্জ্বল করে দেশের সম্মান বয়ে আনবে।’
নরসিংদীর নবজাগরণ ফুটবল একাডেমির পরিচালক রিদমের প্রথম কোচ মো অলিদ খাঁন ইতালিতে ছাত্রের এমন উত্তরণে আবেগে আপ্লুত আনন্দিত উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে মেহেদী হাসান রিদম খুদে শিক্ষার্থী হিসেবে ভাই হৃদয়ের সাথে আমার একাডেমিতে ভর্তি হন। আমার তত্তাবধানে ৮-৯ মাস শিক্ষা নেন। খুদে শিক্ষার্থী হিসেবে যা শিখাতাম দ্রুত শিখে নিতো। সে ‘রিসিভ, কন্ট্রোল, ডিস্ট্রিবিউশন, ড্রিবলিং এবং বল পাসিং বুঝতেন। শেখার আগ্রহ ছিলো প্রচণ্ড। এ কারণে তার দ্রুত উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আদর্শ মিডফিল্ডারের সব গুণাগুণ তার মাঝে রয়েছে।’ কোচ আরও বলেন, ’রিদম মা’র সাথে ইতালিতে চলে যান। ইতালির একাডেমিতে ভর্তি করান তার বাবা। এর পর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ পরামর্শ নিতো। আমিও তাকে সর্বাত্মক পরামর্শ সহযোগিতা করে আসছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সে বড় মাপের ফুটবলার হবে। তার এমন সাফল্যে আমরা খবই গর্বিত। প্রত্যাশা করি সে নামি-দামি বড় ফুটবলার হয়ে দেশ ও বিদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।’