নিজস্ব প্রতিবেদক : কোনো স্বতন্ত্র মতন্ত্র আমরা চিনি না, মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই’-এমন বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে রিমনকে নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের আদালতে হাজির করা হয়। আগামী রবিবার আদালতে শুনানির দিন ঠিক করে কারাগারে পাঠান বিচারক।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক সাফায়েত হোসেন পলাশ সংবাদ মাধ্যমেকে জানান, রিমনকে আজকে কোর্টে তোলা হয়। পরে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করে। পরে আদালত আগামী রবিবার শুনানীর দিন ধার্য করে। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পেটানোর হুমকি দেওয়ার ঘটনায় শুক্রবার দুপুর ১ টায় ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে আদালতে নিয়ে আসা হলে তাঁর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে তাঁরা আদালতের সামনে সড়কে বসে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেন। পরে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে রিমনকে শোকজ নোটিশ দেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নরসিংদীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদুর রহমান নাহিদ। নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরে নিবার্চনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নরসিংদী সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা ওমর ফারুক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর পক্ষে নরসিংদী ক্লাব লিমিটেড আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন বক্তব্য দেন রিমন।
সভায় রিমন আরও বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের কোনো পোলাপান স্বতন্ত্ররে মানতো না। স্বতন্ত্ররে কেমনে পিডাইতে অয়, হে অই দেহাইসে, হেরে আমরা এমনেই পিডামু। এ শহরের, এ সদরের কোনো এলাকায় তাদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) কোনো জায়গা দেওয়া যাবে না। তারা নৌকার বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, তারা দেশবিরোধী। ’
রিমনের এমন বক্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, গত ২৯ নভেম্বর বুধবার দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে অনুষ্ঠিত নরসিংদী-১–এর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভায় নির্ধারিত ভাষণে আহসানুল বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোনো স্বতন্ত্র মতন্ত্র চিনে না। মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না।
স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কীভাবে পিটাইতে হয় হে ওই আমগরে শিখাইছে, হেরে আমরা হেমনেই পিডাইমু। এই আসনের কোনো এলাকায় তাঁদের জায়গা দেওয়া যাবে না। ’ এই বক্তব্য প্রথম আলোর পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত হয়। এমন বক্তব্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন। আইন ভঙ্গের কারণে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।