সাইফুর নিশাদ, মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি : ভূয়া এনটিআরসি সনদ ও সুপারিশে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ মিলেছে নরসিংদীর মনোহরদীর কয়েকটি আলীয়া মাদ্রাসা প্রধানের বিরুদ্ধে। ভূয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে এনটিআরসি সুপারিশ বানিয়ে ৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম করে ১৭ শিক্ষকের নিয়োগ ঘটেছে এখানে। এর মধ্যে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এক উপজেলার ১০ শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগও রয়েছে।
অপর এক মাদ্রাসা প্রধানের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতিতে ৫ শিক্ষক নিয়োগ ও যোগদানের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে।এ জন্য কারন দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে তাকে।এ ছাড়াও আরো ৭/৮ মাদ্রাসা স্কুল ও কলেজে এরকম আরো ১৫/২০ শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আরেক মাদ্রাসায় সভাপতির আপত্তিতে ভূয়া এনটিআরসি সনদ ও সুপারিশধারী ৩ শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম ভন্ডুল হয়েছে।
মনোহরদীতে জাল এনটিআরসি সনদ ও সুপারিশের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য এর মধ্যে তারাকান্দী টি কিউ এ এইচ দাখিল মাদ্রাসার অবস্থান শীর্ষে। জাল জালিয়াতির শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি এখানে ওপেন সিক্রেট। সেখানে একসাথে এক উপজেলার ১০শিক্ষক নিয়োগ লাভ করেছেন জালিয়াতির মাধ্যমে। মাদ্রাসার সুপার এমারত হোসেন প্রত্যক্ষ যোগসাজশে এসব ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এতে কাপাসিয়া উপজেলার ১০ স্থায়ী বাসিন্দা জাল এনটিআরসি সনদ ও সুপারিশে এখানে শিক্ষকতা লাভ করেন। তাদের মধ্যে কাকতালীয়ভাবে ৩ জনের বাড়ী কাপাসিয়ার এক গ্রামে। একজন মাদ্রাসা সুপার এমারত হোসেনের সহোদর। এ নিয়ে সামাজিক গুঞ্জন ও অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। তথাপি এ নিয়ে তাদের কোন রকম কর্তৃপক্ষীয় জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা সুপার এমারত হোসেন জানান, তার মাদ্রাসায় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কোন শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা ঘটেনি। অযথা এসব নিয়ে আলাপ করে সময় নষ্ট করার কোন অর্থ হয় না।
এদিকে উপজেলার চরসাগরদী আলিম মাদ্রাসায় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে রেজুলেশন করে ভূয়া এনটিআরসি সনদ ও সুপারিশে ৫ শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে চর সাগরদী আলীম মাদ্রাসায় গত ১ অক্টোবর গভর্নিং বডির একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গভর্নিং বডির অজ্ঞাতসারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আঃ রহিমের বিরুদ্ধে ভূয়া এনটিআরসি সনদ দিয়ে ৫ শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্নের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষকে কারন দর্শাওয়ের নোটিশও দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও খিদিরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জামিল বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করিম জানান, অধ্যক্ষকে কারন দর্শানোর নোটিশের ব্যাপারে তিনিও অবহিত আছেন।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রহীম জানান, যথানিয়মে যথাযথভাবেই ৫ নয়, ৪ শিক্ষকের নিয়োগ ও যোগদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সবই গভর্নিং বডির রেজুলেশন অনুযায়ী হয়েছে। তিনি সভাপতির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, মাদ্রাসার আভ্যন্তরীন একটি নিয়োগে সভাপতি মোটা অংকের লাভবান হয়েছেন। সম্প্রতি সে নিয়োগ বাতিল হয়েছে। এ নিয়োগের ব্যাপারে তার উপর সভাপতির চাপ ছিলো। সে চাপ উপেক্ষা করেন বলে তাকে ফাঁসাতে সভাপতি উঠেপড়ে লাগেন বলে দাবী অধ্যক্ষের।
এদিকে চরসাগরদী মাদ্রাসার এসব বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসের একটি তদন্ত চলমান বলে একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল জলিল জানিয়েছেন। এছাড়াও ইতোপূর্বে উপজেলার শেখেরটেক মাদ্রাসা সুপারের যোগসাজশে তিন শিক্ষক জাল এনটিআরসি সনদ ও সুপারিশ নিয়ে মাদ্রাসায় যোগদান করতে আসেন। মাদ্রাসার সভাপতি ও কাচিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন কনকের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়।
বিপদ বুঝে জালিয়াত শিক্ষকরাও তড়িঘড়ি সেখান থেকে সটকে পড়েন। গফরগাঁও উপজেলার ‘আব্দুল্লাহ ইউনিভার্সিটি’ নামে খ্যাত কাপাসিয়ার একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ জাল জালিয়াতির প্রধান কুশলীব বলে জানা গেছে। ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে এসব জাল জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন।