নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীর মনোহরদী পৌর এলাকায় খাটের নীচে ৬ দিন লাশ রেখে পুনরায় জীবিত হওয়ার ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৮) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
এরআগে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৮) ও তার ৪ কন্যা মৃত মা শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৫) লাশ খাটের নীচে রেখে পুনরায় জীবিত হওয়ার আশায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই ৬ দিন বাড়ীতে বসবাস করছিলেন। পরে লাশ পচে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে খাটের নীচ থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বলেন, মরদেহ অবমাননাকর করার অভিযোগে নিহতের বোন রুমানা সুলতানা বাদী হয়ে মোক্তার উদ্দীন তালুকদারকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে এঘটনায় রবিবার তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। আর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা দাফন সম্পূর্ণ করে। মেয়ে ও নাতী- নাতনীদেরকে ও স্বজনদের জিম্বায় দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশেই নিজেদের বাড়ীতে বসবাস করতেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৮), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৫৫), মেয়ে মাহবুবা তালুকদার (৪০) রোকসানা তালুকদার (৩৪), আফরোজা তালুকদার (২৮) , নিষাদ তালুকদার (২৫) ও তাদের দুই নাতী ও এক নাতনী। এই পরিবারের সবাই শিক্ষিত। চার মেয়ের তিনজনই অনার্স পাস ও একজন অধ্যয়নরত।
বড় মেয়ে মাহবুবা তালুকদার উপজেলার বড়চাপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রায় দেড় বছর যাবত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান।
তারা সবাই আটরশি পীরের ভক্ত ছিলেন। তারা কেউই বাসা থেকে বের হতেন না। নিজেরাই বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এসব নিয়ে প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও কোন সুদত্তর দিতেন না। তারা প্রতিদিন রাত ৩ টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন।
নিহত শামীমা সুলতানা নাজমা তার পরিবারের সদ্যদের বলে গিয়েছিলেন তিনি যদি কোন সময় মারা যায় তাহলে তার লাশ রেখে যেনো অপেক্ষা করা হয়। তিনি তিন থেকে চারদিন পর পুণরায় জীবিত হবেন।
গত সোমবার শামীমা সুলতানা নাজমা মারা গেলে তার পরিবারের সদ্যরা বিষয়টি কউকেই জানায় নি। তারা সকলেই মায়ের জীবিত হওয়ার আশায় লাশ খাটের তলে রেখে অপেক্ষা করতে থাকে।
এদিকে প্রতিবেশীরা পচাঁ গন্ধ পেতে থাকে। তারা ইদুঁর মরে গন্ধ ছড়ায় ভাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে গন্ধ তীব্র হওয়ায় পাশাপাশি তাদের রহস্যজনক চলাচলের কারণে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোন সাড়া দেয়নি।
পরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে গেলে দেখা যায় তারা সবাই ঘরেই অবস্থান করছে। এসময় খাটের নীচ থেকে নাজমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় রবিবার মরদেহ অবমাননাকর করার অভিযোগে নিহতের বোন রুমানা সুলতানা বাদী হয়ে মোক্তার উদ্দীন তালুকদারকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর মেয়েদেরকে স্বজনের জিম্বায় দিলে তারা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের অর্জুনচর গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। আর গতকাল রাতে মরদেহের দাফন করা হয়।
নিহতের প্রতিবেশী জেলা পরিষদের সদস্য ইসরাত জাহান তামান্না বলেন, তাঁরা অসামাজিক। তাঁরা সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে বাড়িটিতে অবস্থান করেন। কারও সঙ্গে দেখা করতেন না, কথাও বলতেন না। তাদের আচরণ আমাদের কাছে রহস্যজনক লাগতো। পুলিশসহ আমরা যখন বাড়িটিতে গেলেও তাঁরা গেট খুলছিলেন না, ছাদও ছিল তালাবদ্ধ। তখন বাধ্য হয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখা যায়, খাটের নিচে তোষকে মোড়ানো নারীর লাশ। তীব্র দুর্গন্ধের মধ্যেই তিন শিশুসহ তাঁরা আটজন সেখানে অবস্থান করছিলেন।