আলমগীর পাঠান, নরসিংদীর কন্ঠস্বর : একজন সাদা মনের মানুষ নরসিংদীর বেলাব উপজেলার কৃতি সন্তান লাল সবুজ চেতনা সংসদ-এর প্রধান উপদেষ্টা ও ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পিডির দায়িত্বে আছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের।
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের সররাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। শিক্ষা জীবনে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে সফলতার সাথে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ও সফল হন।
১৯৮৬ সালে নারায়ণপুর সরাফত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসিতে ১ম বিভাগ পেয়ে পাস করেন। ১৯৮৬ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েও হামিদ সাহেবের নির্দেশে নারায়ণপুর রাবেয়া মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এতে ১ম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে হামিদ সাহেবের কলেজ হতে ১৯৮৮ সালে এইচএসসিতে একমাত্র ১ম বিভাগ পান তিনি।
প্রথমে বুয়েটে মেটালার্জিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে বাকের সাবজেক্ট পছন্দ না হওয়ায় পরবর্তীতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা করেন। ১৯৮৯ হতে ১৯৯৫ পর্যন্ত চুয়েটে তিনি শহীদ তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেন্ট্রাল ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। তখন ছাত্রশিবির ও এনডিপির বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছে যা আজও শরীরে ওই ক্ষত চিহ্ন নিয়ে বয়ে বেড়ায়।
চুয়েটে থার্ড ইয়ার পর্যন্ত প্লেসধারী ছাত্র হলেও ছাত্রলীগের রাজনীতির কারণে পরীক্ষার পূর্বে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় প্লেস ছুটে যায়। তারপরও সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ১ম বিভাগ পেয়ে পাস করেন এবং পরে উচ্চশিক্ষার স্কলারশীপ পেয়েও চাকরি করা জরুরী প্রয়োজন থাকায় বিদেশে পড়তে যাননি। ১৯৯৬ সাল থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় নিয়োজিত। সরকারী চাকুরীর আগ পর্যন্ত বিল্ডিং ডিজাইনের কনসাল্টিং ফার্মের ব্যবসা করেছিলেন তিনি।
ঢাকায় একজন বিল্ডিং স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে খাইরুল বাকের খুব সুপরিচিত লাভ করেন । অসবসর সময়ে আঞ্চলিক স্মৃতি ও জীবনী নিয়ে লেখালেখি করতে পছন্দ করেন তিনি। ২০১৮ সালে আবদুল হামিদ এম.এসসি সাহেবের জীবনী লিখেছেন, যা গত ৩০ বছরে কেউ করতে পারেনি।
২০২০ সালে নরসিংদীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও বই প্রকাশ করেছেন তিনি। এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব সকলের সামনে তুলে ধরতে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন। স্ত্রী সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে নিয়জিত রয়েছেন।
স্বামী-স্ত্রী ২০/২৫ বছর সরকারি চাকরী করেও ঢাকায় কোন বাড়ির মালিক হতে পারেননি এই দম্পতি। এখনো ৬ ভাইয়ের যৌথ সংসার তাদের। যা এই এলাকায় একটি উদাহরন হিসাবে আছে। চার দশক যাবত ঢাকায় তার ভাইদের কারখানার ব্যবসা আছে। প্রত্যেকেই মোটামুটি স্বচ্ছল। সদালাপী ও ঢাকায় অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত খায়রুল বাকের। নিজের ২টি সন্তানকেই ঢাকার সাধারণ বাংলা মিডিয়ামে পড়াচ্ছেন।
ইঞ্জিনিয়ার খাইরুল বাকের সম্পর্কে বেলাব প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশিকুল ইসলাম হানিফ বলেন,
তিনি সদালাপী ও নিরহংকার স্বভাবের কারণে সকলের কাছেই প্রিয় ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সাথে যোগাযোগ ও সকল ভালো কাজে সহযোগিতার মানসিকতার কারণে তরুণদের কাছে তিনি একজন সফল ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
প্রেসক্লাবের সদস্য ও আজকের পত্রিকার বেলাব উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ আলমগীর পাঠান বেলেন, ইঞ্জিনিয়ার খাইরুল বাকের বর্তমানে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পিডির দায়িত্বে সহ সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত। নারায়ণপুর আব্দুল হামিদ শিক্ষা কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা হামিদ সাহেবের কবর পাকা করে চিহ্নিত করেছে যা গত ৩৩ বছরেও কেউ করতে পারেনি।
বর্তমানে এলাকার নতুন প্রজন্মের স্বচ্চ মানুষদের কাছে ইঞ্জিনিয়ার খায়রুল বাকের একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তরুণদের বক্তব্য- “অনেক ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার দেখেছি, তারা সুযোগ পেলেই ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমায়, কিন্তু বাকের সাহেব তা করেননি। তার মত এমন সাধারণ চলাফেরা কোন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারকে দেখিনি।”
সল্লাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফায়েজুর রহমান ফয়েজ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কালীন বেলাব-রায়পুরা উপজেলার সঠিক ইতিহাস আপন লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরতে ইঞ্জিনিয়ার খায়রুল বাকের যে অদম্য প্রয়াস কার্যত দেখিয়ে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়, সামাজিক বহুমুখী কার্যক্রমে মানবিকতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবিচল থাকার ধৈর্য্য আর সাহসিকতা দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। এমন মানবিক মানুষজনদের বড়ই অভাব আজকের সমাজে।
নরসিংদীর কন্ঠস্বর/আ.পাঠান/স. হোসেন/