নিজস্ব প্রতিবেদক : কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি ডায়মন্ডের নাকফুলসহ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।
প্রায় ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জনে এ টাকা গণনার কাজ করেন। শনিবার (৬ মে) সকাল ৮টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। পরে তা মসজিদের দোতলায় গণনার জন্য নেওয়া হয়।
টাকা গণনা শেষে রাত ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার চার মাস পর মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। এতে রেকর্ড ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা পাওয়া গেছে।
কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এই মসজিদে আটটি লোহার দানবাক্স আছে। ৬ মে সকালে
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটি এম ফরহাদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ৭ জানুয়ারি ৩ মাস ১দিন পর দানবক্স খোলা হয়েছিল। ২০টি বস্তায় তখন রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া গিয়েছিল।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল আটটার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়েছে। দানবাক্স গুলো খুলে ১৯টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় আনা হয়েছে গণনার জন্য। এখন চলছে গণনার কাজ।
গণনার কাজে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহুয়া মমতাজ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোসাম্মৎ নাবিলা ফেরদৌস, সাদিয়া আফরিন তারিন, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
মসজিদের খতিব এলাকাবাসী ও দূরদূরান্ত থেকে আসা সূত্রে জানা যায়, এ মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ মসজিদে দান করে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল এই সাধকের আস্তানায়। পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাশ থেকে বিভিন্ন বয়সের মুসলিম-হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু,ছাগল, হা়ঁস-মুরগী এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা ও দান করেন।
বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদের মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী- পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এই মসজিদে। আর এই ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
বর্তমানে ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে অন্যতম শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় সন্ধ্যা নদীর তীরে মাত্র ১০% জমির উপর গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদটি তিন একর ৮৮ শতাংশ জায়গা আছে এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য।