সাইফুর নিশাদ, মনোহরদী প্রতিনিধি : জীবন যুদ্ধের সৈনিক আমরা সকলেই। জীবনের শুরু থেকে শেষ অব্দি নানান কুট কৌশলে জীবিকার অন্বেষনে সময় অতিবাহিত করে যাই। আমাদের সমাজে ব্যতিক্রমী কিছু জীবন যুদ্ধ থাকে যে গল্পটা শুনলে চোখের জল ঝড়তে বাধ্য। ঠিক তেমন-ই একটা ৩৫ বছরের গল্প বৃদ্ধা দম্পতির যা আপনার মনকে ভারাক্রান্ত করেই ছাড়বে।
বৃদ্ধ দম্পতির শূন্য থেকে জীবন পরিবর্তনের স্বপ্ন
শুরুতে সামান্য ভিটে থাকলেও ত্রিশ বছর আগে নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। যাদের নিজেদের থাকার মত একটি ভাল ঘর নেই, বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে জরাজীর্ণ একটি টিনের ছাপড়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। সংসারে লাগামহীন নানা বোঝা টানতে টানতে এখন ক্লান্ত, সময়ের পরিক্রমায় হয়ে পড়েছিলেন অক্ষম, শক্তিহীন এই দম্পতি। তবুও দু মুঠো আহারের জন্যে হাত পাতেনি কারো কাছে। কোনদিন একবেলা আবার কোনদিন কয়েক মুঠো মুড়ি চিবিয়ে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে রাত্রিযাপন করতেন। ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকলেও দীর্ঘ ৩৫ বছরে তাদের শুধু একবেলা পেট ভরে খাওয়ার চিন্তা দূর হয়নি কখনও।
এভাবেই চলতেছিলো তাদের দিন। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপাদাহ, বৈশাখের নির্মম ঘূর্নি, শীতের তীব্র ঠান্ডা পেড়িয়ে যখন বসন্ত এসে আমাকে আপনাকে নতুন স্বপ্নের নতুন রঙে সাজিয়ে দেয় ঠিক তখনও তাদের সেই একবেলা আহারের স্বপ্ন থেকেই যেতো। হটাৎ-ই কিছু মানবিক সংবাদকর্মীর নজরে আসলে বিভিন্ন দৈনিক ও নরসিংদীর কন্ঠস্বরসহ বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচার করতে থাকে এই দম্পতির জীবন সংগ্রামের কথা।
পাঠক মহলে আলোচনায় আসে খবরটি। আসতে থাকে সহায়তা। বিষয়টি সামনে আসায় আরো কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়। ফলে পাল্টাতে থাকে বৃদ্ধের কষ্টের দিন।
তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে নাফিসা আঞ্জুম খানের পরিচালিত একজন বাংলাদেশ ও ইতি টিম। তারা দিনভর বিরতিহীন পরিশ্রম করে রঙ্গিন টিন দিয়ে নতুন দিনের বেঁচে থাকার চিন্তাহীন এক স্বপ্ন দাঁড় করিয়ে দেন বৃদ্ধা দম্পতিদের। শুধু কি তাই? এতটুকু করে ক্ষ্যান্ত হননি তারা। নতুন দোকানের পাশাপাশি নতুন ৩৫ টি আইটেম দিয়ে পুরো দোকানটি রঙিন প্রচ্ছদে সাজিয়ে দেন।
যেহেতু গল্পটা ৩৫ বছরের সেহেতু সেই ৩৫ কে অলংকৃত করতে ৩৫ টি আইটেমের স্বপ্নের বীজ দোকানে বুনে দেন মানবিক মানুষ গুলো। সবগুলো কাজ তারা নিজেদের হাতেই করেছে। এসব কাজের তদারকি ও নেতৃত্ব দেয় ‘একজন বাংলাদেশের’ প্রতিষ্ঠাতা নাফিসা আঞ্জুম খান ও তার সংগঠনের সদস্যরা৷ তাদের সাপোর্ট দেন এক-ই সংগঠনের নরসিংদী জেলার সদস্য জাহিদ হাসান ইতি ও তার সহকর্মীরা।
উল্লেখ্য, জরাজীর্ণ শরীলে বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী। অভাব অনটন আর ক্ষুধার যন্ত্রনা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী । একবার খেলে আরেক বেলার খাবার কপালে জুটবে কিনা, তা নিয়ে দুঃচিন্তায় থাকতে হত। নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার শেষ প্রান্তে চরমান্দালীয়া ইউনিয়নের বেরিবাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। এরা হলেন মোঃ শামসু মিয়া (৯০) ও জহুরা খাতুন (৭০) দুই বৃদ্ধা।
জানা যায়, শুরুতে সামান্য ভিটে থাকলেও ত্রিশ বছর আগে নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এরপর থেকে কখনও ভাসমান জীবন আবার অন্যের জমিতে ঝোপড়ি ঘর বেধে থাকছেন ভূমিহীন দুই বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রী। অন্যের জায়গায় বাঁশ বেত দিয়ে বেধেছেন ঝোপড়ি দোকান। পুঁজিমাত্র ছিলো তাদের ১০০ টাকা। অবিশাস্য হলেও এই পুঁজি দিয়ে শুরু থেকে দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন তারা।