নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীর বড় বাজারে রাত্রীকালীন ডিউটি পালনের সময় দুই আনসার সদস্যকে মারধোর করে অস্ত্র ও গুলি লুটের ঘটনায় দূর্ধর্ষ ডাকাত চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েদা পুলিশ (ডিবি)।
গত ২৬ ডিসেম্বর ঘটনার পর থেকেই তদন্তে নেমে নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বাগেরহাট এবং খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া দুটি শর্টগান ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
আজ সোমবার দুপুরে নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম।গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার মোহাম্মদ দেওয়ানের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪২), সিরাজ খলিফার ছেলে দেলোয়ার খলিফা (৩৭) ও মতি খলিফা (৪২), মৃত নূরুল উদ্দিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪৫), মাদারীপুর সদরের উত্তর কাউয়াকুরি গ্রামের মৃত ফজলু হাওলাদারের ছেলে ফরিদ হাওয়ালাদার (৪৫) ও কালু হাওলাদার (৩৮), শিবচর থানার আবদুর রব খা এর ছেলে ফারুক খা (২১), বাগেরহাট জেলার ফকিরাহাট থানার শেখ আবদুল মালেকের ছেলে শেখ আল মামুন (৩২), জাফরা থানার মৃত শেখ মহিউদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৫৭) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার অহিদ মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭)।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিদিনের মতো সোমবার রাতেও নরসিংদী বাজার বণিক সমিতির আনসার ক্যাম্পের ৪ জন সদস্য একইসাথে বাজার এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। হাড়িধোয়া নদীর তীরে বড় বাজার এলাকার আনসার ফাঁড়ির সামনে টহলের সময় হঠাৎ পেছন থেকে ১৫ থেকে ২০ জনের এক দল ডাকাত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে।
এ সময় দুই জন আনসার সদস্য দৌঁড়ে সরে গেলে বাকি দুইজন আনোয়ারুল ও জাফর ইকবালকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তাদের কাছে থাকা দুটি শর্টগান এবং দশ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা ভোর সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের পঞ্চবটি বাজারে অস্ত্রের মুখে পাহাড়াদারদের জিম্মি করে তাদেরকে একটি ঘরে আটকে রেখে একে একে ২২টি মুদি মাল, মোবাইল, স্টেশনারী ও ঔষুধের দোকানের তালা কেটে নগদ টাকা লুট করে।
এ ঘটনায় ২৮ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত আনসার ভিডিপির কর্মকর্তা লুৎফর নাহার লতিফা বাদী হয়ে নরসিংদী সদর থানায় ১৫ থেকে ১৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপরই তদন্তে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক দল একাধিক অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত ১০ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যে লুট হওয়া দুটি অস্ত্র ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় ।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম বলেন, তারা সকলেই পেশাদার ডাকাত। তাদের দলে ১৬ থেকে ১৭ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতির কাজ করে থাকে। ডাকাতির কাজে ব্যবহার করার জন্য রয়েছে ডাবল ইঞ্জিনের স্পিডবোর্ড। এই চক্রকে ২০২১ সালের জুন মাসে ডাকাতির ঘটনায় জেলা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিলো।
পরে তারা জেল থেকে বের হয়ে আবার ডাকাতি শুরু করে। ঘটনার দিন তারা মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে আনসার সদস্যদের মারধোর করে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। এসময় বাজারে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সটকে পড়ে। কিন্তু যাওয়ার পথে করিমপুর ইউনিয়নের পঞ্চবটি বাজারে কয়েকটি দোকানে তারা ডাকাতি করে।
তিনি আরো বলেন, তারা ডাকাতি করেই জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। আমাদের দলের দিন-রাত নিরলস প্রচেষ্ঠায় তাদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছি। এই ঘটনায় জড়িত অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।