নরসিংদীর রায়পুরায় এক নির্জন কলাবাগান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে। গতকাল সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে ও আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত দুজনের স্ত্রী থানায় এসে তাদের লাশ শনাক্ত করেন। তারা বলছেন, নিহত দুজনই নিয়মিত জুয়া খেলতেন এবং এই সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরেই ফোন করে তাদের ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের কলাবাগান থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুইজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যার পর তাদের লাশ কলাবাগানে ফেলে রেখেছিল দুর্বৃত্ত্বরা।
নিহত দুজন হলেন, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের পাহাড়ফুলদী গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে দ্বীন ইসলাম (৩৪) ও রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আলাউদ্দীনের ছেলে আলী হোসেন (৪২)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় এক কৃষক ওই বাগানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুই ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশে থাকা কৃষকেরা সেখানে ছুটে আসেন। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল দিলে বেলা দেড়টার দিকে রায়পুরা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
এ সময় কলাবাগানের ভেতরে ১৫ হাত দূরত্বে দুই ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিহত দুজনের মাথাসহ মুখমণ্ডলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের পাশে পাওয়া যায় একটি দড়ি ও কিছু টাকা। পরে পুলিশ লাশ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহত দ্বীন ইসলামের স্ত্রী শাহিদা বেগমের ভাষ্য, এক গণ্ডা জমিতে আমাদের ঘর। ঘরটিতে এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে আমরা থাকি। তিনি কিছুই করতেন না, তবে নিয়মিত জুয়া খেলতেন। রোববার বিকেলে তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পরই তিনি ‘বাজারে যাই’ বলে বেরিয়ে যান। ওই রাতে আর বাড়িতে ফেরেননি, অনেকবার কল দিয়েছিলাম, মোবাইল বন্ধ পাচ্ছিলাম।
পরদিন সোমবার দিনভর তাঁর কোন খোঁজ না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। পরে কলাবাগান থেকে দুইজনের লাশ পাওয়া গেছে শুনে আজ সকালে রায়পুরা থানায় যাই। সেখানে গিয়ে পড়নের কাপড় ও ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করি। আমি নিশ্চিত, জুয়া খেলার কথা বলে ডেকে নিয়ে সঙ্গের লোকজনই তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।
কাকে সন্দেহ করছেন জানতে চাইলে শাহিদা বেগম বলেন, আমি আন্দাজে কাকে সন্দেহ করব? কই গেছে, কার সঙ্গে গেছে, কে ডেকে নিয়েছে, কিছুই তো জানি না। পুলিশকেই তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
নিহত আলী হোসেনের স্ত্রী রেনু বেগম বলেন, তিনি দিনমজুর ছিলেন এবং দুই সংসারে তাঁর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে আছে। প্রায়ই তিনি সুযোগ পেলে জুয়া খেলতেন। রোববার বিকেলে তাঁর মোবাইলে কল করে কেউ তাকে যেতে বলেন। ওই ফোন পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যান। কোথায় যাচ্ছেন, তাও বলে যাননি। রাতে বাড়ি না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় তাঁর খোঁজখবর করা হয়।
পরে গতকাল সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি আমাকে দেখান স্বজনরা। পরে রাতেই থানায় গিয়ে স্বামীর লাশ শনাক্ত করি। তিনি আরও বলেন, জুয়া খেলা নিয়ে কারো সঙ্গে তাঁর হয়তো দ্বন্দ্ব চলছিল। হয়তো ওই দ্বন্দ্বের জের ধরেই তাকে ডেকে নিয়ে ওই কলাবাগানে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা আমার স্বামীকে এত নির্মমভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, নিহত দুজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। আজ দিনের মধ্যেই তাদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কারা এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। এর সঙ্গে জুয়া খেলার বিষয়টি সম্পর্কিত কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই জোড়া খুনের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কোন পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা লিখিত অভিযোগ পাইনি। পরিবার দুটির সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন, লাশ হস্তান্তরের পর দাফন শেষে তারা মামলা করতে আসবেন।