নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীর পলাশে তুচ্ছ ঘটনায় এক কিশোরকে চারদিন ঘরে আটকিয়ে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুুক্তভোগী ওই কিশোরের নাম আসিফ মিয়া (১৫)। সে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের জয়পুরা গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। আসিফ বর্তমানে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। ভুক্তভোগী কিশোর আসিফ মিয়ার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এই ঘটনায় শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকালে নির্যাতিত কিশোরের বড় ভাই আব্দুল্লাহ বাদি হয়ে দুই জনকে অভিযুক্ত করে পলাশ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগে, (২৩ অক্টোবর রবিবার) সকাল থেকে (২৬ অক্টোবর) বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গজারিয়া ইউনিয়নের সরকারচর গ্রামের সুলতান মিয়ার মুরগির খামারে আটকে রেখে ওই কিশোরের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে প্রায় অচেতন অবস্থায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভুক্তভোগী ওই কিশোর পালিয়ে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দিলে পরিবারের সদস্যরা ওই কিশোরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নির্যাতিত কিশোরের বড় ভাই আব্দুল্লাহ জানান, তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। খুব কষ্ট করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের মা সংসারের দারিদ্রতা দূর করতে বিদেশ পাড়ি দেয়। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে আসিফ মিয়া সবার ছোট। সংসারের অভাব অনটন দূর করতে আসিফ মিয়া সরকারচর গ্রামের সুলতান মিয়ার মুরগির খামারে ৭ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি নেয়। ঘটনার দিন (২৩ অক্টোবর রবিবার) সকালে মুরগির খামারের মালিক সুলতান মিয়ার ছোট ভাই নাছির মিয়া খামারে আসলে খামারের সাথেই থাকার একটি ঘরের চৌকিতে মুরগির বিষ্টা দেখতে পায়। এরপরই আসিফকে ডেকে এনে চরথাপ্পর মারতে থাকে।একপর্যায়ে তার গলা দা দিয়ে কেটে ফেলার চেষ্টা করাসহ বিভিন্ন কায়দায় অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় আমার ছোট ভাইয়ের ওপর।
এই ঘটনায় শুক্রবার সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকেই অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য সুলতান মিয়া ও তার ছোট ভাই নাছির মিয়া আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অভিযোগ তুলে না নিলে আমাদের দুই ভাইকে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে। তারা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার তিন দিন পরও আইনি সহযোগিতাসহ কোনো বিচার পাচ্ছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আব্দুল্লাহ।
ভুক্তভোগী কিশোর আসিফ মিয়া বলেন, মুরগির খামারে এসে যখন নাছির ভাই আমাকে ডাক দেয়। তখন আমি মুরগিকে খাবার দিচ্ছিলাম। নাছির ভাইয়ের ডাকে আসতে একটু দেড়ি হওয়ায় আসামাত্র তিনি আমাকে চরথাপ্পর মারতে থাকে। এসময় আমি ওনাদের এখানে আর কাজ করবো না বলা মাত্রই তিনি আমার গলায় চিপ দিয়ে ধরে আমার গলায় দা চালিয়ে হত্যা চেষ্টা চালায়। আর বলতে থাকে তোর গলা কেটে মাইরা লাইলেও আমার কিচ্ছু হইতো না। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে আমাকে ওই ঘরেই তালাবন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর দেখি ঘরের বাহির দিয়ে তালা দেওয়া। পরে নাছির মিয়ার বড় ভাই সুলতান মিয়া খামারে আসে। আমি তখন গলার ব্যথায় কথা বলতে পারছিলাম না। তবুও অনেক কান্নাকাটি করে আমাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে বললেও ওনারা আমাকে হাসপাতাল না এনে উল্টো আমাকে ভয় দেখাতে থাকে। আমি যেনো এই ঘটনা বাহিরে কাউকে না বলি। যদি বলি,তবে একবারেই আমাকে মেরে ফেলবে। এভাবে বুধবার পর্যন্ত আমাকে আটকে রেখে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করাসহ ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। একপর্যায়ে বুধবার সন্ধ্যার দিকে প্রস্রাব করার কথা বলে বের হয়েই আমি কৌশলে দৌড়ে বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘটনাটি জানালে তারা আমাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুলতান মিয়ার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার দিন আসিফের সাথে আমার ছোট ভাই নাছিরের কথা কাটাকাটির হওয়ার একপর্যায়ে ধাক্কা লাগলে আসিফ পড়ে গিয়ে টিনের বেড়ায় লেগে তার গলা কিছুটা কেটে যায়। এছাড়া তাকে আর কোনো মারধর করা হয়নি।
এ ব্যাপারে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আমি শনিবার রাতে কিশোর আসিফ মিয়াকে নির্যাতনের ঘটনাটি শোনার পর হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাই নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।