নরসিংদীর শিবপুরে মজলিসপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদিয়া আফরিন সাথী সম্প্রতি মানসম্মত শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শ্রেণিকক্ষ সজ্জিত করণ, কর্মদক্ষতা আর শ্রেনী কক্ষে গুনগত পাঠদানের অবদান রাখায় শিবপুর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক (মহিলা) নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক সাদিয়া আফরিন সাথী করোনাকালীন সময়ে সাবলীল গতির রিডিং পড়ার অদক্ষতা দূর করতে গ্রহণ করেছিলেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয় সাংবাদিক মোমেন খানের সাথে।
তিনি বলেন, সকল শিশু একই পদ্ধতিতে শিখে না। বয়স ভেদে শেখার ধরনও হয় ভিন্ন থেকে ভিন্নতর। প্রখ্যাত শিশু মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড গার্ডনার তাঁর শিশু বিষয়ক গবেষণায় দেখিয়েছেন “শিশু বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে শিখে”। মূলত একটা শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় প্রাক – প্রাথমিক শ্রেণি থেকে যেখানে প্রতিটি শিশুর বয়স ৫ বছর। শিশুরা সব সময় আলোচনা শোনে শিখতে চায় না।
তিনি বলেন, তারা নিজ চোখে দেখে বা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত শিখে, অনেকে আবার কোন যন্ত্রের সবগুলো পার্টসই এলোমেলো করে দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে শিখে। অনেক শিক্ষার্থী আবার ছড়া, গান,নৃত্য ভালোবাসে। শিখন শেখানো কার্যাবলীতে এসবের সংযোজন শিক্ষার্থীদের শিখনকে স্হায়ী করতে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে। মূলতঃ উপকরণ বিশিষ্ট একটি পাঠ শিক্ষার্থীর শিখনকে সফল পরিণতির দিকে ধাবিত করে।
একটি বিদ্যালয়ের প্রাণ সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা”। আমার মনেও প্রিয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য হাজারো স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দোলা দিয়ে যায়। করোনা মহামারী চলাকালীন নিত্য-নৈমিত্তিক বিভিন্ন চাহিদায় যেমন ভাটা আসে তেমনি কোমলমতি প্রাণ-পাখিদের(শিক্ষার্থীদের) পড়ালেখায়ও কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। নিজ বিদ্যালয়ে সরাসরি পাঠদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে। দুশ্চিন্তার বেড়াজালে যখন মুহ্যমান প্রায় প্রতিটা শিক্ষকের অন্তর-আত্মা ঠিক তখনই মনে হলো “সময় হলো বুঝি স্বপ্ন সারথীর নতুন স্বপ্ন পূরণ করার”।
করোনা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষার্থীদের রিডিং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিয়ে নিজ বিদ্যালয়ে গড়ে তোলি -“রিডিং কর্নার”। অটো প্রমোশনে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও ঘাটতি দেখা দেয় সাবলীল গতিতে রিডিং পড়তে না পারায়। রিডিং কর্নারে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির যে সকল শিক্ষার্থীরা সাবলীল গতিতে বাংলা ও ইংরেজি রিডিং পড়ায় এখনও পুরোপুরি দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি মূলত তাদেরকে দক্ষ ও সাবলীল করে গঢ়ে তোলা হয়।
চলমান “শ্রেণি কর্মসূচী” তে প্রতি বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ঃ৩০ মিনিট থেকে ৩ঃ৫৫ মিনিট অর্থাৎ ২৫ মিনিট করে হলো এই কার্যক্রমের ব্যপ্তিকাল যেখানে প্রতি সপ্তাহেই পর্যায়ক্রমে একজন সহকারী শিক্ষককে ট্যাগ করা হয়েছে। পাশাপাশি আমি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রিডিং দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এরই ফলশ্রুতিতে সাবলীলভাবে রিডিং পড়া এখন অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার রূপরেখা। আমি বিশ্বাস করি “স্বপ্ন সারথীর স্বপ্ন এবার পাবে পূর্ণতা, অচিরেই দূর হবে সাবলীল গতিতে রিডিং পড়ার অদক্ষতা “।