মোঃ আশাদউল্লাহ মনা : স্টেশন মাস্টার ছাড়াই চলছে নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশাল ফ্লাগ স্টেশন ও ঘোড়াশাল রেলস্টেশন দুটির কার্যক্রম। ইতিমধ্যে স্টেশন মাস্টার ও জনবলের অভাবে অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াশাল রেল স্টেশনটি।
এক কিলোমিটার দুরত্বের এ দুটি রেল স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ছে ঘোড়াশাল থেকে যাতায়াতরত শত শত রেল যাত্রীরা। একই সাথে স্টেশন মাস্টার না থাকায় সিগন্যাল ছাড়া চলাচল করায় ব্যঘাত ঘটছে রেল চলাচলেরও। এতে করে যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
রেল স্টেশনে ট্রেন সাধারণত সময়সূচী অনুযায়ী চলাচল করে। যাত্রীরাও সে অনুযায়ী স্টেশনে উপস্থিত হন। কিন্তু এদেশেই এমন দুটি স্টেশন আছে যেখানে ট্রেন কখন আসে-যায় তা অনেকেই জানেনা। যারা নিয়মিত চলাচল করেন তারা ট্রেনে থাকা যাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে ট্রেনের অবস্থান জেনে নেন।
দুটি রেল স্টেশনের মধ্যে একটিতে বুকিং সহকারী থাকলেও অপরটি বন্ধ থাকায় এক দিকে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অপর দিকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রেলের মূল্যবান সম্পদ। পাশাপাশি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
দেশের সবচেয়ে পুরাতন স্টেশন হচ্ছে ঘোড়াশাল রেল স্টেশন ও ঘোড়াশাল ফ্লাগ স্টেশন। ১৯১০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এই স্টেশন দুটি নির্মিত হয়। পলাশের ঘোড়াশাল একটি শিল্প এলাকা। এখানে দেশের বৃহৎ তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সারকারখানা, প্রাণ ফুড ফ্যাক্টরী, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, পেপার মিল, জুট মিল, স্যামরি ডায়িং, ওমেরা গ্যাস সিলিন্ডার ফ্যাক্টরী, প্লাস্টিক ও ইউনিয়ন টি কোম্পানীসহ ছোট বড় প্রায় শতাধিক শিল্প কারখানা অবস্থিত।
আর এ সকল কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মচারীরা প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত করে। অপরদিকে পলাশে কোন বাস সার্ভিসও না থাকার কারণে অনেকেই রেল গাড়ীতে যাতাযাত করে থাকে।
প্রতিদিন এ দুটি স্টেশন থেকে পলাশ উপজেলার প্রায় ৪ শতাধিক যাত্রী ট্রেনে চলাচল করে। ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্রগ্রামের রেল যোগাযোগ এ স্টেশন দুটি দিয়েই হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই দুটি স্টেশনে মাস্টার না থাকার কারণে সিগন্যাল ছাড়াই ট্রেন চলাচল করছে। প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে স্টেশনটি অস্থায়ী ভাবে বন্ধ রেখে পাশের জিনারদী ও আড়িখোলা স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। রেল যাত্রীরা জানান, আমরা প্রতিদিন এ স্টেশন থেকে ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলার
বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করি। গত কিছু দিন ধরে স্টেশন দুটিতে কোন মাস্টার না থাকার কারনে কখন গাড়ী আসে যায় তা জানতে পারি না। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় গাড়ীর জন্য। দুর্ভোগের আরেক নাম এ ঘোড়াশাল রেল স্টেশন।
তবে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন বেশ কয়েক জন যাত্রী জানিয়েছেন, ট্রেনের ভিতরে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব ও রায়পুরার যাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে ট্রেনের অবস্থান জানতে হয়। এখানকার একটি স্টেশন বন্ধ ও আরেকটিতে বুকিং সহকারী দায়িত্বে থাকলেও তারা ট্রেনের অবস্থান বলতে না পারে না।
এদিকে স্টেশন দুটিতে লোকবল না থাকার কারনে প্রতিরাতে বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। রাতের বেলায় স্টেশন দুটিতে নেশা খোরদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়।
ঘোড়াশাল ফ্লাগ স্টেশনের বুকিং সহকারী মোঃ মাসুদ সরকার জানান, এ স্টেশনে মাস্টার নেই দীর্ঘ দিন ধরে। আমি একাই এখানে কোন রকম চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে গত কয়েকদিন আগে ঘোড়াশাল রেল স্টেশনের একমাত্র মাস্টারকেও প্রত্যাহার করে নেয়ায় রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থাসহ আধুনিক অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এতে করে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ঘোড়াশাল স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে চামড়াবো এলাকায় অবস্থিত অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংটি। স্টেশন মাস্টার থাকা অবস্থায় সেখান দিয়ে ট্রেন আসা যাওয়ার সময় সিগন্যাল লাইট দেখে গেটম্যানরা সড়কে গেট ফেলতে পারতো। বর্তমানে সিগন্যাল লাইট বন্ধ থাকায় ট্রেনের শব্দ শুনে ও দূর থেকে ট্রেনের মাথা দেখে গেট বন্ধ করতে হচ্ছে তাদের। এতে করে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন গেটম্যানরা।
ঘোড়াশাল রেল স্টেশনে ৩ জন মাস্টার, ৩ জন পয়েন্টসম্যান, ১ জন পোর্টার ও ১ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পোস্ট থাকলেও সেখানে বর্তমানে একজন বুকিং সহকারী দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
এদিকে মাস্টার ছাড়া ঘোড়াশাল ফ্লাগ ও রেল স্টেশন দুটি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পাশের জিনারদী স্টেশন মাস্টার হাসানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি হয়নি। এদিকে বড় ধরণের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াশাল রেল স্টেশনটি পুণরায় সচল করবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।