1. admin@narsingdirkanthosor.com : admin :
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
বেলাবতে দুর্গা পূজা উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পলাতক হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার নরসিংদী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ায় সাগরে ডুবে বেলাব’র যুবকের মৃত্যু নরসিংদীতে পানিতে পড়েছিল চালকের মরদেহ খোকা : আমীর হামজা (রাসকিন আহমেদ জুয়েল) নরসিংদীর রায়পুরায় দুই কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ, গুরুতর আহত ২  বেলাবতে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময় গর্ভবতী মায়ের অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর মেধা বিকাশে অন্তরায় তেমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সফলতায়ও : আমির হামজা মনোহরদীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২৫

১০ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্মৃতি যাদুঘর

নাসিম আজাদ | নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২
  • ২৪৫ বার

নাসিম আজাদ, নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ২০ আগষ্ট বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান’র ৫১তম শাহাদাতবার্ষিকী । ১৯৭১ সালের এই দিনে তিনি পাকিস্তান বিমান ঘাটি থেকে বিমান হাইজ্যাক করে নিয়ে আসার পথে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দেশের এই বীরের সম্মানে নরসিংদীর রায়পুরায় তার গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফাইট লে. মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হলেও দীর্ঘ দশ বছরেও তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।

গ্রন্থাগারে বেশ কিছু বই সাজানো রয়েছে কিন্তু জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। মনে হতে পারে সাধারন কোনো পাঠাগার এটি। এমন কি, অবহেলায় পড়ে আছে তার পৈত্রিক ভিটাও। বাঙালি জাতি যে কতোটা বিস্মৃতি পরায়ণ তার প্রকৃষ্ট নজির এটি। জাতির শ্রেষ্ঠ সম্মাানে ভূষিত হওয়ার পরও তাকে ভুলে যেতে আমরা দ্বিধা করিনি।

রায়পুরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নজরুল ইসলাম মতিউর রহমান গ্রন্থাগার এবং মতিউর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে তার ব্যবহারিক জিনিসপত্র ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদে গেলে চোখে পড়ে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্মৃতিফলক ‘বাংলার ঈগল’। কালো পাথরের ত্রিমুখী এই ফলকের একটিতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের প্রতিকৃতি, আরেকটিতে জীবন বৃত্তান্ত। অন্যটি পুরোপুরি ফাঁকা, খোলা আকাশের প্রতীক। মাঝে ফলকগুলোকে যে ধরে রেখেছে সেটিতে টেরাকোটায় আঁকা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দৃশ্য। সবার ওপরে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর গ্রামের পথ নির্দেশক।

এই উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বীরশ্রেষ্ঠর গ্রামটির নাম রামনগর থেকে পরিবর্তন করে রাখা হয় মতিউর নগর। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পাড়ে গড়ে ওঠা রামনগর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরনগর রাখা হয়। আর তা বাস্তবায়িত হয় বর্তমান সরকারের আমলে, ২০১৫ সালে।

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরনগর নামফলকটি প্রকৃতই সুন্দর । এটি দেখেই যে কেউ উচ্ছসিত হতে পারেন। কিন্তু মতিউর নগরে গিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর তার স্মৃতিচিহ্ন না দেখেই হতাশ হয়ে পড়তেই পারেন। ২০০৮ সালে ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করে নরসিংদী জেলা পরিষদ।

তালবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে পৈতৃক বাড়ি বর্তমানে মতিউর রহমানের বাড়িতে কেউ থাকেন না। একটি টিনসেড বিল্ডিং। ওই বিল্ডিংয়ের পাশেই থাকেন মতিউর রহমানের স্বজনরা। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর অবশেষে ২০০৬ সালে ২৪ জুন মতিউরের দেহাবশেষ সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে এনে ঢাকায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আবার দাফন করা হয়েছে।

শহিদুল্লাহ আক্ষেপ করে বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে জানতে তার গ্রামের বাড়িতে আসেন। কিন্তু কোনো স্মৃতিচিহ্ন না থাকার পাশাপাশি বাড়িটি বন্ধ থাকায় তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।’

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের তত্বাবধায়ক এনামুল হক বলেন, ‘জাদুঘরটি এক নজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। কিন্তু গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে প্রবেশ করে বীরশ্রেষ্ঠের কোনো স্মৃতিচিহ্ন দেখতে না পেয়ে তারা হতাশা ব্যক্ত করেন।’

গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের সহকারী গ্রন্থাগারিক আকলিমা আক্তার বলেন, ‘গ্রন্থাগারে দুই হাজার আটশ’র মতো বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে প্রায় পাঁচ বছর আগের বই ছাড়া নতুন কোনো বই নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ের চাহিদাই বেশি।’

গ্রন্থাগারে নতুন বই আনা প্রসঙ্গে মতিউরনগরের বাসিন্দা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে তা তত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই হয়েছে। ওই সময় স্মৃতি জাদুঘরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বীরশ্রেষ্ঠদের অবদান সম্পর্কে জানানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা এখন আর বজায় নেই।’

গ্রামের কলেজ ছাত্র আল আমিন বলেন,‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের কারণেই আজ আমরা গর্বিত। তার নামে গ্রামের নাম হয়েছে, এলাকায় জাদুঘর হয়েছে। অন্য এলাকায় গিয়ে মতিউর নগরের নাম বললেই সবাই চিনে থাকেন।

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ভাতিজা শহিদুল্লাহ জানান, রাম নগরে মতিউরের শৈশব কেটেছে। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়ি আসেন মতিউর রহমান। তখন ঢাকা আন্দোলনে উত্তাল। ২৫ মার্চের গণহত্যা দেখে তিনি খুবই মর্মাহত হন। ফিরে যান করাচির কর্মস্থলে স্ত্রী মিলি রহমান ও দুই কন্যার কাছে।

ওখানে থাকলেও মন পড়ে থাকে দেশের জন্য। সে সময়ই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, যে কোনোভাবে একটি জঙ্গি বিমান হাইজ্যাক করে ভারতে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সুযোগ খুঁজতে লাগলেন তিনি।

অবশেষে সেই সুযোগ এলো ২০ আগস্ট। দুর্দান্ত সাহসী মতিউর জীবনের মায়া ত্যাগ করে, স্ত্রী কন্যার ভবিষ্যৎ না ভেবে করাচির মসরুর বিমান ঘাঁটি থেকে একটি জঙ্গি বিমান ‘হাইজ্যাক’ করলেন। কিন্তু ততক্ষণে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে খবর ছড়িয়ে পড়েছে “ব্লুবার্ড” হাইজ্যাক হয়েছে।

এদিকে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নেওয়ার জন্য মতিউর এবং তরুণ পাইলট অফিসার মিনহাজ রশিদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কিন্তু মতিউরের অদম্য স্বপ্ন পুরণের আগেই ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা নামক স্থানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধমাইল দূরে অত অবস্থায় পাওয়া গেলেও মিনহাজের লাশের কোনো হদিস মেলেনি। পরে মতিউরকে মসরুর বিমানঘাঁটির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে দাফন করা হয়।

মিনহাজ রশীদ যুদ্ধরত অবস্থায় মারা গেছে বলে পাকিস্থান সরকারের কাছ থেকে পান সেদেশের সর্বোচ্চ খেতাব ‘নিশানে হায়দার’। আর পাকিস্তানি প্রচারযন্ত্র দিনের পর দিন বাংলার বীর সন্তান মতিউর রহমানকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে অ্যাখ্যায়িত করে খবর প্রচার করতে থাকে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ সম্মানে ভূষিত করা হয় মতিউর রহমানকে।

কপিরাইট নরসিংদীর কন্ঠস্বর/ সম্পা: সা.হো/এন আজাদ/

আরো খবর..
© নরসিংদীর কন্ঠস্বর
Developed By Bongshai IT